Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
2023-24 অর্থবছরে রাজস্ব খাতের আওতায়”নার্সারী ব্যবস্থাপনা” বিষয়ক প্রশিক্ষণ
বিস্তারিত

মাছ চাষের ক্ষেত্রে রেনু পোনাকে ছোট জলাশয়ে প্রতিপালন করে অপেক্ষাকৃত বড় জলাশয়ে বা পুকুরে ছেড়ে মাছ চাষ করা হয়। যে সকল ছোট পুকুরে বা জলাশয়ে রেনু পোনা বা ধানী পোনা অতি যত্ন সহকারে পালন করা হয় তাকে আতুর পুকুর বা নার্সারি পুকুর বলে।

মাছের রেনু বা ধানী পোনা প্রয়োজনীয় পরিচর্যার মাধ্যমে লালন পালন করে মজুদ পুকুরে ছেড়ে চারা পোনায় উন্নীত করার পদ্ধতিকে নার্সারি ব্যবস্থাপনা বলে। অর্থনৈতিক দিক থেকে নার্সারী ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় নার্সারি পুকুর ব্যবস্থায় উন্নত পদ্ধতি অনুসরন করা প্রয়োজন। ৩-৫ দিনের রেণু ছেড়ে পোনা তৈরী করাকে নার্সারি বলে।

পোনা চাষে পুকুরের বৈশিষ্ট্য/নার্সারি পুকুরের বৈশিষ্ট্যঃ
যে কোন অগভীর, বাৎসরীক বা মৌসুমি পুকুরকে মাছের পোনা প্রতিপালনের জন্য নার্সারি পুকুর হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে আতুর পুকুর ছোট হওয়ায় ভাল।

কার্প জাতীয় মাছের পোনা প্রতিপালনের উপযোগী নার্সারি পুকুরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো – পুকুরটি হবে খোলামেলা, ভালো যাতায়েত ব্যাস্থা, উত্তর- দক্ষিন লম্বা হলে ভাল হয়, আয়তন ১০-২৫ শতাংশ, পানির গভীরতা ২.৫- ৩ ফুট, দো-আশ, পলি দো-আশ বা এটেল দো-আশ মাটি, তলদেশে কাদার বেশী না হওয়ায় ভাল, জলজ আগাছা না থাকা, বন্যা মুক্ত শক্ত ও উচু পাড়, পড়ে গাছ বা ঝোপঝাড় না থাকা, পানি নিষ্কাশন ও সরবরাহ ব্যবস্থা থাকা প্রভৃতি।

 নার্সারি ব্যবস্থাপনাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ ক) আতুর পুকুর ব্যবস্থাপনা; খ) কাটাই বা লালন পুকুর ব্যবস্থাপনা

ক) আতুর পুকুর ব্যবস্থাপনাঃ আতুর পুকুরে সাধারনত ১০-১৫ দিন রেণু পোনা লালন পালন করা হয়। এই পুকুরে সঠিক ব্যবস্থাপনার উপর মাছের পোনা বাঁচার হার এবং বৃদ্ধি নির্ভর করে।

ক) আগাছা ও পাড় পরিস্কারঃ নার্সারি পুকুর পাড়ের আগাছা পরিস্কার করতে হবে এতে বেশী আলো পড়ে
– পোনার প্রাকৃতিক খাদ্য বেশী তৈরী হয়
– পোনা উৎপাদন বেশী হয়
– মাঘ-ফাল্গুন- চৈত্র মাসে এ কাজটি করতে হবে।

খ) পুকুরের পাড় মেরামত ও তলা সংস্কার ঃ-
– প্রতি বছর নার্সারি পুকুর শুকানো ভাল
– পুকুর শুকানোর পর ভাঙ্গা পাড় উচু,মজবুদ,এবং ছিদ্রবিহীন ভাবে মেরামত করতে হবে
– অতিরিক্ত কাদা তুলে ফেলে অসমান তলদেশ সমান করতে হবে
– শুকানোর পর তলায় চাষ দিতে হবে
– পুকুর পাড়ের ঢাল ১ঃ২ হতে হবে

পুকুরের পাড় ও তলা সংস্কারের উপকারিতাঃ –
– মাটি চাষ দিলে মাটির বাধন আলগা হয় তাতে সূর্যের আলো মাটির গভীরে প্রবেশ করার ফলে রোগ জীবানু মারা যায় এবং মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে
-পুকুরের মাটি ও পানির গুনাগুন ভাল থাকে
– তলার বিষাক্ত গ্যাস দূর হয়
– পোনা মাছ আহরনের সময় জাল টানা সহজ হয়
– পুকুরের পাড় মেরামত ও উচু হলে রেণুপোনার চাষ এবং পরিচর্যা সহজ হয়
– বাইরের দূষিত পানি ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না
– বাইরের রাক্ষুসে ও অচাষকৃত প্রজাতীর মাছ পুকুরে ঢুকতে পারবে না।

গ) জলজ আগাছা দমনঃ পুকুরে ভাসমান , ডুবন্ত নানা জাতের আগাছা ও শেওলা তুলে ফেলতে হবে কারন ঃ
– মাছের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে
– মাটি ও পানির পুষ্টিকর উপাদান ব্যবহারের কারনে পুকুরে মাছের খাদ্য তৈরীতে বাধার সৃষ্টি হয়
– নার্সারি পুকুরে অতিরিক্ত তন্তÍ জাতীয় শেওলা থাকলে পোনা আহরনের সময় তন্তÍ জাতীয় শেওলায় আটকে পোনা মারা যায়
– কায়িক শ্রম দ্বারা এ আগাছা দূর করা যায়
– প্রতি শতাংশে ৮-১০ গ্রাম তুতে(কপার সালফেট)পানিতে মিশিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিলে ৩-৪ দিনের মধ্যে সমস্ত শেওলা মারা যায়।

জলজ আগাছ নিয়ন্ত্রনের উপকারিতাঃ
– পানিতে সরাসরি আলো পড়ে ফলে প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়
– পোনা মাছের জন্য ক্ষতিকারক জীবানু ও প্রাণী ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে না
– পোনা মাছের চলাচল সহজ হয় এবং জাল টানতে সুবিধা হয়
– খাদ্য প্রয়োগে সুবিধা হয়
– পোনা উৎপাদন বেশী হয়।

ঘ) রাক্ষুসে ও অচাষকৃত মাছ দূরীকরনঃ রাক্ষুসে মাছ চাষকৃত মাছের রেণু / পোনা খেয়ে ফেলে, অচাষকৃত মাছ চাষকৃত মাছের রেণু / পোনার খাবার খেয়ে ফেলে তাই নার্সারি পুকুর হতে রাক্ষুসে ও অচাষকৃত মাছ যেমন-শোল,টাকি, গজার, বোয়াল,ফলি,চান্দা পুটি, মলা,চেলা,শিং মাগুর , কৈ সহ যে কোন ধরনের রাক্ষুসে ও অচাষকৃত মাছ দূর করতে হবে। মাছের রেনু পোনা ছাড়ার আগেই পুকুর শুকিয়ে ,বার বার জাল টেনে অথবা রোটেনন প্রয়োগ করে রাক্ষুসে ও অচাষকৃত মাছ পুকুর থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
রাক্ষুসে ও অচাষকৃত মাছ দূরীকরনের উপকারিতাঃ
– রেণুর বাচার হার বেশী
– মাছের পোনা বাচার হার বাড়ে
– প্রাকৃতিক ও সম্পূরক খাদ্যের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হয়
– মাছের রোগ বালাই হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

রাক্ষুসে ও অচাষকৃত মাছ পুকুর থেকে দূরীকরনের উপায় –
পুকুর শুকিয়েঃ নার্সারি পুকুর হতে রাক্ষুসে ও অচাষকৃত মাছ দূরীকরণের সর্বোত্তম উপায় হলো শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচে শুকিয়ে ফেলা। পুকুর শুকানোর পর তলায় প্রয়োজনে চাষ দেওয়া এবং কড়া রোদে বেশ কিছুদিন (১৫ দিন) পুকুর ফেলে রাখা। এ কাজ টি ফাল্গুন-চৈত্র মাসে করলে খরচ ও সময় দুইই কম লাগে।

বার বার জালটেনেঃ পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে ঘন ফাসের জাল বার বার টেনে রাক্ষুসে ও অচাষকৃত মাছ দূর করা যায়।

ডাউনলোড
ছবি
প্রকাশের তারিখ
27/12/2023
আর্কাইভ তারিখ
31/12/2024